ঈদের ছুটিতে ঘুরতে যাবার মত কয়েকটি জায়গা
কর্মব্যস্ত জীবন থেকে বেরিয়ে কোথাও গিয়ে কিছুদিনের জন্য নিরিবিলি সময় কাটাতে কে না চায়। আমাদের দেশে ঘোরার মত বেশ কয়েকটি জায়গা রয়েছে। যে জায়গাগুলোর অপরূপ সৌন্দর্য মনকে করে শান্ত এবং বিমোহিত। চলুন, ঈদের ছুটিতে সেরা কয়েকটি জায়গা ভ্রমণের ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক।
কক্সবাজার
কক্সবাজারে রয়েছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। বিভিন্ন নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বসবাসে বৈচিত্রময় এ জেলার জনপ্রিয় স্থানগুলো হচ্ছে- হিমছড়ি, সেন্ট মার্টিন, কলাতলী সী বিচ, বৌদ্ধ বিহার, সোনাদিয়া দ্বীপ, কুতুবদিয়া দ্বীপ,রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড ইত্যাদি। তাছাড়া সুগন্ধা সী বিচে রয়েছে মাছ, কড়ি, শঙ্খের দোকান। এই জায়গাগুলো ঘুরতে ঘুরতে সময় আপনা আপনি কেটে যায়।
সাজেক
রাঙ্গামাটির সাজেক ভ্যালি একটি পর্যটন স্থান। সারা বছরই বর্ণিল সাজে সাজেক সেজে থাকে। বছরের যেকোনো সময় সাজেক চাইলে ভ্রমণ করা যায়। মূলত কংলাক পাহাড়ে সাজেক ভ্যালির অবস্থান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং মেঘের খেলা দেখতে সাজেক আদর্শ জায়গা। যারা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন তারা সাজেক দেখার পাশাপাশি কমলক ঝর্ণা,হাজাছড়া ঝর্ণা, দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ, দীঘিনালা বনবিহার দেখে আসতে পারেন।
সিলেট
রাতারগুল - এটি বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট হিসেবে পরিচিত। একমাত্র মিঠাপানি এই জলাবনে খুঁজে পাওয়া যায়। রাতারগুলের এই বন আপনাকে বেধে রাখবে প্রাকৃতিক মায়াবী সৌন্দর্যে।
জাফলং - জাফলং থেকে দেখা যায় ভারতের মেঘালয় এবং ছবির মত সাজানো শহর ডাউকি। আর জাফলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য নিদর্শন।
এছাড়াও রয়েছে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর, বিছানাকান্দি, লালাখাল, শ্রীমঙ্গল, খাদিমনগর পার্ক, চা বাগান।
রাঙ্গামাটি
আয়তনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জেলা রাঙ্গামাটি। পাহাড় নদীবেষ্টিত একটি বৈচিত্র্যময় জনপদ যেখানে চাকমা, মারমা, মুরং, ত্রিপুরা, বম, খুমি, পাংখুয়া, লুসাই সহ প্রায় ১৪টি জনগোষ্ঠীর বাস আছে। এখানে দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য - ঝুলন্ত সেতু, সুবলং ঝর্ণা, ধুপপানি ঝর্ণা,মুপ্পোছড়া ঝর্ণা, রাজ বনবিহার প্রভৃতি।
সুন্দরবন
সুন্দরবন হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। প্রায় ১০,০০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই বনটি বাংলাদেশ ও ভারতে অবস্থিত। এই বিশাল রহস্যময় বনটি দেখতে ৩-৪ দিন সময় লাগে। সুন্দর বনে গেলে যে যে জায়গায় ঘোরা উচিত - হিরন পয়েন্ট, দুবলার চর, কচিখালি সমুদ্র সৈকত, করমজল, হারবাড়িয়া, সুধন্যখালী ওয়াচ টাওয়ার, নেতি ধোপানি দ্বীপ, সুন্দরবন ন্যাশনাল পার্ক সহ বেশ কিছু জায়গা।
কুয়াকাটা
কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি সমুদ্র সৈকত। কুয়াকাটা "সাগরকন্যা" হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের অন্যতম নৈসর্গিক সমুদ্র সৈকত এটি। এখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়।
কুয়াকাটা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত পাশাপাশি হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি পবিত্র তীর্থস্থান। এখানে মূলত রাখাইন জনগোষ্ঠী বসবাস করে।
কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থানগুলো হচ্ছে - আমখোলা পাড়া রাখাইনপল্লী, নয়াপাড়া বৌদ্ধবিহার, শুটকি পল্লী, ইলিশ পার্ক এন্ড রিসোর্ট, ক্র্যাব আইল্যান্ড, গঙ্গা মতির জঙ্গল, ফাতরার বন, কুয়াকাটার কুয়া, মিশ্রি পাড়া বৌদ্ধমন্দির।
নিকলি হাওর
খোলামেলা পরিবেশের স্নিগ্ধ ছোঁয়া পেতে কিশোরগঞ্জের নিকলি হাওর থেকে ঘুরে আসা যায়। সেখানে রয়েছে পানিতে দ্বীপের মতো ভেসে থাকা ছোট ছোট গ্রাম, রাতারগুলের মত ছোট জলাবন, জেলেদের মাছ ধরার মনোরম দৃশ্য, স্বচ্ছ হাওরের পানি। বর্ষার দিনে নিকলি হাওয়ার ঘোরার মত উপযুক্ত একটি জায়গা। এ সময়টায় হাওর পানি ভর্তি থাকে। একদিনের জন্য ঘুরে আসার মত সুন্দর একটি জায়গা।
বান্দরবান
চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে বান্দরবান বাংলাদেশের পর্যটন মানচিত্রে উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের তিনটি উচ্চতম স্থান বান্দরবানে অবস্থিত । তাজিন ডং, মৌদক মৌল ও কেওক্রাডং। বান্দরবানের এক একটি স্থানের সৌন্দর্য এক এক রকম। এত মনমুগ্ধকর সৌন্দর্য এই বান্দরবানে রয়েছে তা যদি আপনি না যান কখনো জানতে পারবেন না। এ যেন উঁচু-নিচু সবুজ পাহাড়ে ঘেরা মন কাড়ানো সৌন্দর্য।
বান্দরবান জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে - বাকলাই ঝর্ণা, বগা লেক, কেওক্রাডং, নাফাখুম, রেফাক্রি, নীলগিরি, নীলাচল, থানচি, প্রান্তিক লেক, রিজুক ঝর্ণা, রাজবিহার, চিম্বুক পাহাড়, জাদিপাই ঝর্ণা প্রভৃতি।
আপনার হাতে যদি সময় বেশি থাকে তাহলে এই জায়গাগুলো অনায়াসে ঘুরে আসতে পারবেন। বান্দরবানে আসা পর্যটকদের সুবিধার্থে অনেক রিসোর্ট রয়েছে।
ছুটিতে ঘুরতে যাওয়ার সময় অবশ্যই সতর্কতার সাথে থাকা উচিত। কিছু ওষুধপত্র, ব্যান্ডেজ, পানির বোতল কাছে রাখবেন এবং টাকা-পয়সা, ব্যাগ এগুলো সযত্নে নিজের কাছে রাখবেন।