না জেনেই ডায়েট করার কুফল এবং পরিত্রাণ পেতে করনীয় |

ডায়েট বলতে আমরা সচরাচর বুঝি শরীর সুস্থ রাখতে ফ্যাট ঝরানো আর ওজন কমানো৷  তবে ডায়েট শুধু ওজন কমানো নয়, বাড়ানোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।  এককথায় ডায়েট হলো পরিমত পরিমান পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখবে। 

 

আর এই ডায়েট নিয়ে যদি সঠিক জ্ঞান না থাকে সেক্ষেত্রে ওজনের তারতম্য হয়  না বরং বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দেয়। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক:

না বুঝে ডায়েটের ফলে কি কি অসুবিধা হতে পারে 

 

. অনেকেই মনে করে না খেয়ে বা একবেলা খেলেই বুঝি ডায়েট হয়ে গেলো। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বরং কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম না মেনে দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলে শরীরের উপরে চাপ পড়ে যা থেকে মাথাব্যথা, দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা, ক্লান্তি, ইটিং ডিসওর্ডার, মুড সুইং  ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়৷ 

 

. ডায়েট শুরু করার ক্ষেত্রে অনেকেই ইউটিউববিভিন্ন সোসাল মিডিয়া, ইনফ্লুয়েন্সারকে ফলো করেন। এটি ডায়েট করার ক্ষেত্রে একটি বড় ভুল স্টেপ। কারণ প্রত্যেকের শারীরিক গঠন, খাবারের চাহিদা, আভ্যন্তরীণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, হরমোনের সিক্রেশন, মেটাবলিক রেট ইত্যাদি সমান হয় না। তাই একজনের ডায়েট অন্যজন ফলো করলে রেজাল্ট আশানুরূপ না হওয়াতে অনেকেই ডিপ্রেসড হয়ে পড়েন।

 

. ডায়েট করার ক্ষেত্রে অনেকেই শুধু খাবারের উপরেই বেশি গুরুত্ব দেয়। এটা ডায়েট সম্পর্কে একটি অজ্ঞতার ফল।  ডায়েট করা মানে খাবারের সাথে সাথে লাইফস্টাইলেও পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন নিয়মিত খাবারের সাথে পরিশ্রম, পর্যাপ্ত ঘুম ব্যায়াম করতে হবে এবং মানসিকভাবেও প্রফুল্ল থাকতে হবে। তা না হলে কখনোই ডায়েটের ফল পাবেন না।

 

. না জেনে ডায়েট করলে আমাদের শরীরের উপরে একটি সাময়িক পরিবর্তন আসলেও তা দীর্ঘমেয়াদী কোনো অসুখের কারণ হতে পারে। অনেকেই শুধু ওজন কমানোর জন্য ক্রাশ ডায়েট, কিটো ডায়েট, ওয়াটার বেসড ডায়েট, ভেগান ডায়েট ইত্যাদি করে থাকে। এতে করে ফলাফল দ্রুত আসলেও শরীরে অনেক নিউট্রিয়েন্ট এর ঘাটতি থেকে যায় যার ফলে দীর্ঘমেয়াদি চুল পড়া, ত্বক খসখসে হওয়া, কিডনী সমস্যা, লিভারে সমস্যা, অনিয়মিত পিরিয়ড ইত্যাদি হতে পারে।

 

. অতিরিক্ত ডায়েট করলে অনেকসময় বিপাকক্রিয়ার এর প্রভাব পরে। খাবার ঠিকঠাক হজম হয় না ফলে ওজন স্থির থাকে। অনেকসময় অবৈজ্ঞানিক উপায়ে অতিরিক্ত না খেয়ে থাকার ফলে মস্তিষ্কে গ্লুকোজের মাত্রা কমে গিয়ে শরীরের উপর দীর্ঘমেয়াদী বিরুপ প্রভাব ফেলে। 

 

আর তাই ডায়েট করার আগে কিছু বিষয় সম্পর্কে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  এগুলা জানা থাকলে আপনি ডায়েটের সুফল পাবেন এবং একইসাথে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবেন

 

ডায়েট করার আগে যেসব জিনিস জানা দরকার -

 

. একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা আপনি আসলে কি কারণে ডায়েট করছেন সেটা নির্ধারণ করুন। আপনি কি মেদ ঝড়াতে চাচ্ছেন নাকি শরীরের মাসল গেইন করতে চাচ্ছেন, আপনি কি লোকের কথায় ওজন কমাতে/ বাড়াতে চাচ্ছেন নাকি আপনার বর্তমান ওজন আপনার শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভর করে আপনি কোন ধরণের ডায়েট করবেন। যদি লক্ষ্যহীন ভাবে ডায়েট করেন সেক্ষেত্রে ডায়েটের উপকারিতার চেয়ে অপকারিতাই বেশি দেখবেন।

 

. পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন : আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাল্যাকটোজ ইনটরালেন্স, হরমোনের ইমব্যালেন্স, পিরিয়ড সংক্রান্ত জটিলতাপ্রসব পরবর্তী সময় ইত্যাদি বিভিন্ন ফ্যাক্টর আপনার ওজনের উপর ক্রিয়া করে। আর তাই আপনি ওজন কমাতে/ বাড়াতে চাইলে অবশ্যই একজন পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করা অত্যন্ত জরুরি। তিনি আপনার শরীরের চাহিদা অনুযায়ী একটি ডায়েট চার্ট প্রস্তুত করে দেবেন যা আপনার শরীরে সকল নিউট্রিয়েন্ট এর চাহিদা পূরণ করবে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করবে। 

 

. লাইফস্টাইলে পরিবর্তন : ডায়েট করার ক্ষেত্রে লাইফস্টাইলে পরিবর্তন একটি আবশ্যকীয় কর্তব্য! শুধু দুবেলা ভাত খাওয়া ছেড়ে দিলাম কিন্তু একমিনিট পরিশ্রম করা হচ্ছে না, তাহলে অবশ্যই ওজন নিয়ন্ত্রণে আসবে না। তাই খাবারের সাথে সাথে লাইফস্টাইলেও আনতে হবে পরিবর্তন। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে, মানসিক শান্তি নিশ্চিত করতে হবে। তবেই ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

 

কথায় আছে " কাল কেন  আজ কর, আজ কেন, এখনি কর।" যখন একবার ডায়েট করবেন বলে ঠিক করেছেন তাই দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে শুরু করে দিন। শরীরকে সুস্থ রাখতে ডায়েটের বিকল্প নেই। 

 

আর অবশ্যই বিভিন্ন লাইফস্টাইলহেয়ার কেয়ার, স্কিন কেয়ার  ইত্যাদি বিষয়ে জানতে এবং প্রোডাক্ট সম্পর্কে ধারণা পেতে সাজগোজের সাথেই থাকুন।

 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url