কিভাবে সুশৃঙ্খল জীবন-যাপন করবেন?

 শৃঙ্খলাবোধ

 

মানবজীবনে সফলতার চাবিকাঠি হলো শৃঙ্খলা।  নিয়মানুবর্তিতা, আনুগত্যবোধ, যথোচিত আচরণ প্রভৃতির সমন্বয়ে গড়ে উঠে শৃঙ্খলা। শৃঙ্খলা মূলত মানুষের বাহ্যিক আচার-আচরণ দৈনিক কাজকর্মের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। 

 
জীবনে শৃঙ্খলার প্রয়োজনীয়তা 

জীবনের সর্বক্ষেত্রে রয়েছে শৃঙ্খলার প্রয়োজনীয়তা। মূলত শৃঙ্খলা ব্যতিরেকে জীবনে সাফল্য লাভ অসম্ভব। 

স্কুলে ছেলেমেয়েদেরকে শৃঙ্খলা শিখানো হয়। মূলত শৃঙ্খলার হাতে খড়ি হয় স্কুল জীবন থেকে। স্কুলের নিয়মানুবর্তিতা, বিধি-নিষেধ শিক্ষার্থীদের শেখার আদর্শবোধ, ন্যায় সহমর্মিতা শৃঙ্খলা বোধ শেখায। মানব জীবনের প্রতিটি স্তরে শৃঙ্খলার সুফল ভোগ করা যায়। যে যত বেশি শৃঙ্খল তার জীবন তত বেশি গোছানো। 

মানব জীবন বড়ই বিচিত্র। এই এক জীবনে শৃঙ্খলা পালন করা জরুরী। মানব জীবনে শৃঙ্খলার প্রয়োজনীয়তা প্রতিটি পদে। শৃঙ্খল ব্যক্তি উশৃঙ্খল ব্যক্তির তুলনায় এগিয়ে থাকে। একদম শৃঙ্খল ব্যক্তির সময় সম্বন্ধে জ্ঞান থাকে। সে জানে কখন কি কাজ করতে হবে এবং যা তার জন্য ভালো। 

বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবন কাহিনী থেকে আমরা জানতে পারি তারা তাদের ব্যক্তিগত জীবনে অনেক বেশি শৃঙ্খল। তাদের সকালটা তারা একটি নির্দিষ্ট সময়ে শুরু করে। সকালটা সুন্দর করে শুরু করার ফলেই সারাদিন ভালো যায়। বিল গেটস, মার্ক জাকারবার্গ, ইলন মাস্ক, মুকেশ আম্বানি - এরা হচ্ছেন পৃথিবীর অন্যতম সফল ব্যক্তি বর্গদের মধ্যে এক একজন। উনাদের জীবন কাহিনী থেকে যা জানা যায়, উনারা ব্যক্তিগত জীবনে অনেক বেশি নিয়ম পালন করেন। সময়ের কাজ সময়ে সম্পন্ন করেন। আরে এজন্যই আজ তারা পৃথিবীতে রাজত্ব করতে পারছেন। উনারা মানুষদের জন্য এক আদর্শ। 

আর দশটা সাধারণ মানুষ যদি উনাদের মত বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবন কাহিনী অনুসরণ করার চেষ্টা করে নিজের জীবনে পরিবর্তন আনতে চায় তাহলে অনেকাংশে তারা তা করতে পারবে। মূলত মানুষ কি না পারে। শুধু প্রয়োজন ধৈর্য, নিয়মানুবর্তিতা সময়ানুবর্তিতা। এই গুণগুলো আয়ত্ত করতে পারলেই ব্যক্তির জীবনে অনেকাংশে পরিবর্তন সম্ভব। 

 

শৃঙ্খলার সাথে নিয়মানুবর্তিতা সময়ানুবর্তিতার সম্পর্ক  

যারা নিয়ম-কানুন মানে না এবং সময়ের কাজ সময়ে করেনা তাদের জীবনে প্রায়ই ব্যর্থতা হানা দেয়। শৃঙ্খলার অভাববোধের কারণে অনেকের মেধা শক্তি এবং কাজ করার ক্ষমতা বেশি থাকলেও তারা তাদের কৃতিত্বটা ফলাতে পারে না। 

শৃঙ্খলাবোধ যাদের নেই তারা সব সময় তাদের ব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্র অগোছালো করে রাখে। যার ফলস্বরূপ দেখা যায় যে তারা প্রয়োজনে সময় হাতের নাগালে কিছু পাচ্ছে না। যার কারণে তারা অনেক সময় অনেক বেশি চিল্লাচিল্লি কিংবা রেগে থাকে। রাগারাগি সাধারণত অন্য মানুষের সাথে করে। ফলে মানুষজন তার প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করে। অনেকেই আছে যে এইরকম মানুষের সাথে পরবর্তী জীবনে আর মিশতে চায় না। 

সময়ের জ্ঞানবোধ যার মধ্যে নেই সে নিয়ম মানতেও নারাজ। তার তখন শৃংখল জীবন একঘেয়ে মনে হয়, বিরক্ত লাগে। যে সময়ের কাজ সময়ে করতে পারে না সে নিয়মের বাইরে কাজ করে। আর সময় এবং নিয়মের বাইরে কাজ করে কখনো মানসিক প্রশান্তি লাভ করা যায় না। সময় এবং নিয়ম মেনে কাজ করলে দেখা যায় যে কাজ শেষে কিছুটা সময় হাতে পাওয়া যায় এবং তখন বিশ্রাম করা যায়। কিন্তু সময় এবং নিয়ম না মানলে কাজ হয় এলোমেলো, কাজ সহজে ফুরায় না এবং গোছালোভাবে সম্পন্ন হয় না। 

 

গৃহে শৃঙ্খলার অভ্যাস তৈরি 

ঘরে শৃঙ্খলার অভ্যাস তৈরি করতে যা প্রয়োজন তা হচ্ছে নিয়মিত চর্চা অনুশীলন। ছাত্র জীবন যেমন শৃঙ্খলা অর্জনের উপযুক্ত সময় তেমনি ঘরেও উচিত ছাত্র জীবনের নিয়ম শৃঙ্খলার যথাযথ প্রয়োগ ঘটানো। গৃহে ব্যক্তির শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনের উন্মেষ ঘটে। বাল্যকালে শৃঙ্খলার ক্ষেত্রটি অত্যন্ত ব্যাপক, জীবনের নানান ক্ষেত্রে তা প্রসারিত হয়। 

প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠা,পরিষ্কার হওয়া, নাস্তা করা প্রভৃতির মাধ্যমে সকালটা সুন্দর করে শুরু করা যায়। 

তারপর যে যার কাজ করবে। প্রতিদিন নিদ্রা ভঙ্গ হওয়া থেকে শুরু করে শয্যায় যাবার আগ পর্যন্ত সকল কাজ নিয়মিত এবং যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে হবে। 

পরের দিন কি কাজ করবে তা আগের দিন ভেবে রাখা ভালো। এতে করে কাজ করতে সুবিধা হবে এবং কাজে অগ্রসর ঘটবে। 

পরিবারের সদস্যদের কে সম্মান করা, তাদের আদেশ নিষেধ মেনে চলা, পরিবারে মুরুব্বী ব্যক্তিবর্গ থাকলে তাদেরকে সম্মান করে চলা প্রভৃতির মধ্যে দিয়ে ব্যক্তির মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ জাগ্রত হয়। আর এগুলো আজীবন বজায় রাখতে হবে। শৃঙ্খলাবোধ ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বজায় রাখে। যে ব্যক্তি শৃংখল সে জানে কিভাবে কখন কি করতে হয়, আর এতে করে কিভাবে সুবিধা পাওয়া যায়। 

পিতা মাতার উচিত সন্তান ছোট থাকতেই তাকে নিয়ম-শৃঙ্খলা বোধ শেখানো। যেন ছোট থেকেই সে নিয়ম-শৃঙ্খল জীবনের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আর ছোটবেলার নিয়ম-শৃঙ্খলা বদ্ধতা তাকে পরবর্তী জীবনে একটি সুন্দর মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। এর ফল সে আজীবন ভোগ করবে। তাই পিতা-মাতাকে সন্তানের ভালোর জন্য নিয়ম শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনের প্রতি সচেতন থাকতে হবে। 

 

সমাজের দায়বদ্ধতা এবং শৃঙ্খলা বোধ 

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে মানুষের অবস্থান। মানুষ কখনো একা থাকতে পারে না। সকলকে মিলেমিশে থাকতে হয়। আর এভাবেই গড়ে ওঠে মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ববোধ। ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখা সমাজের মানুষের কর্তব্য। সমাজে একসাথে থাকতে হলে মিলেমিশে থাকতে হবে। 

সমাজে মানুষের সাথে মিলেমিশে থাকতে হলে কিছু নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। আর এই নিয়ম শৃঙ্খলাগুলো মানতে মানুষ বাধ্য। নিয়ম শৃঙ্খলা না মানলে সমাজের বাকি মানুষদের সাথে মিলেমিশে থাকতে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। যে সমাজে মানুষ বসবাস করে সে সমাজ সম্পর্কে উদাসীন থাকাটা অপরাধ। সমাজের সংঘটিত সকল ঘটনা, অবস্থান, প্রকৃতি প্রভৃতি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হয়। শৈশবেই নিয়ম শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনের প্রতি যাবতীয় শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। কারণ শিক্ষার বৃন্তেই জীবনে অন্যান্য বিষয় পরিস্ফুটিত হয়ে ওঠে। 

 

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যা সুশৃঙ্খল তাই সুন্দর। প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য নিজের জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলা। নিজের জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে হলে প্রথমত যে বিষয়টির দিকে খেয়াল রাখতে হবে তা হচ্ছে শৃঙ্খলাবোধ। সময় এবং নিয়মের সাথে শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন পালন করতে হবে। পোশাক- পরিচ্ছদ, আচার-আচরণ, চালচলন, বেশভূষায় ব্যক্তিকে শৃঙ্খলাবদ্ধতা বজায় রাখতে হবে। যে এসব বিষয়ে সুশ্রী হবে সে স্বভাবতই সকলের প্রিয় হবে। অন্যদিকে আছে, কিছু মানুষ যাদের কিনা পোশাক-পরিচ্ছদ, চালচলনের প্রতি খেয়াল নেই। এসব মানুষদেরকে সহসা অন্য মানুষরা পছন্দ করে না। অপরিচ্ছন্ন সাজ সজ্জা এবং বিশ্রী আচরণে তাদেরকে কুশ্রী বলে মনে হয়। 

শৃঙ্খলাবোধ মানুষের মধ্যে এক দিনে আসে না। এটি একটি দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। শৃঙ্খলা শিক্ষা গ্রহণের শুরুর দিকে একে কঠিন বলে মনে হয়।  শুরুর ধারাটা যদি সঠিকভাবে বজায় রাখা যায় তাহলে ব্যক্তি শৃঙ্খলাবোধ শিখে নেয়। একবার শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনটা আয়ত্ত করতে পারলে তা জীবনের অঙ্গীভূত হয়ে যায়। 

 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url