গর্ভাবস্থায় হাসপাতালে গেলে কি কি লাগতে পারে । জেনে নিন বিস্তারিত ভাবে

 হাসপাতালের জন্য যেসব জিনিস জানা জরুরি। 

 


গর্ভাবস্থায় একটি বড় সময় হাসপাতালে চক্কর কাটাতে হয় গর্ভবতী মাকে। প্রথমেই ভ্রুণের উপস্থিতি জানার জন্য পরবর্তীকালে পেটে সন্তান ঠিক আছে কি না, বাচ্চার অবস্থায় সুবিধাজনক কি না ইত্যাদি কারনে বারবার হাসপাতালে যেতে হতে পারে।

 

হাসপাতালে যাওয়ার আগে একটি নির্দিষ্ট হাসপাতাল ঠিক করতে হবে। যেন হাসপাতালের অবস্থায় বাসা থেকে কাছে হয় এবং যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। আয়ের উপর হাসপাতালের ধরণ নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়াও হাসপাতাল সম্পর্কে অনেকখানি ধারনা রাখা জরুরি৷ 

 

প্রথম ত্রৈমাসিকঃ

প্রথম ত্রৈমাসিকে অনেক বেশি ডাক্তারের কাছে যাওয়া আসা হয়। এসময় যেসব জিনিস সাথে রাখা জরুরি তা হলোঃ



  • জরুরি কাগজপত্রঃ ডাক্তারের সাথে দেখা করার জন্য হাসপাতে যাওয়ার সময় অবশ্যই জরুরি কাগজপত্র সঙ্গে রাখতে হবে। জরুরি কাগজপত্র বলতে আগের বিভিন্ন টেস্টের কাগজ, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন, আলটাসনোগ্রাফির কাগজ ইত্যাদি। 
  • টাকাঃ অনেকসময় প্রথম তিনমাসে ডাক্তার অনেক বেশি টেস্ট দিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে টাকা হাতে রাখা অত্যন্ত জরুরি। প্রথম ১৪ সপ্তাহে গর্ভপাতের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে তাই এসময় হাতে প্রয়োজনীয় টাকা নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া উচিত। 

 

দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকঃ এসময় ডাক্তারের কাছে খুব বেশি যাওয়া হয় না। কারণ শুধুমাত্র ফিটাসের শারীরিক গঠন অবস্থান জানার জন্য হাসপাতালে বা ক্লিনিকে আলট্রাসানোগ্রাফি করতে যেতে হয়৷ এসময়ে আগের করা আলট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্ট সাথে রাখতে হয়৷ 

 

তৃতীয় ত্রৈমাসিকঃ এই সময়টায় সবচেয়ে বেশি  হাসপাতালে যাওয়া হয়। যেকোনো সময় প্রসবকালীন ব্যথা উঠতে পারে যেকোনো মূহুর্তেই। তাই আগে থেকে তৈরি থাকা অত্যন্ত জরুরি।  হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে এমন সব সরঞ্জামের লিস্ট তৈরি করে তা গুছিয়ে রাখতে হবে যাতে করে শেষ সময়ের তাড়াহুড়োতে কিছু বাদ থেকে না যায়। 




  • নথিপত্রঃ হাসপাতালে যাওয়ার আগে সকল ডকুমেন্টস এর কপি সাথে রাখতে হবে। বাচ্চা পেটে আসার পর থেকে যত ধরনের টেস্ট করানো হয়েছে তাদের রিপোর্টবিভিন্ন প্রেসক্রিপশনপূর্ববর্তী রোগের প্রেসক্রিপশন, মেডিকেল বীমার কাগজ ইত্যাদি একটি ফাইলে একসাথে রাখতে হবে যাতে ডাক্তার চাওয়ামাত্র দেওয়া যায়।
  • টাকাঃ এসময়ে টাকা হাতে রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেকোনো সময় সার্জারী বা বিভিন্ন টেস্টের দরকার হতে পারে, তাই ব্যাংক থেকে আগেভাগেই কিছু টাকা তুলে আলাদা করে রাখা দরকার হাসপাতালে ব্যয় করার জন্য।



  • ডোনারঃ এসময় সার্জারির কারনে কিংবা নরমাল ডেলিভারি হলেও অনেকসময় প্রচুর রক্তপাত হয় তাই গর্ভবতী নারীর রক্তের গ্রুপের সাথে ম্যাচ করে এমন একজন ডোনারের সাথে যোগাযোগ করে তাকে হাসপাতালে আসতে জানাতে হবে। 



  • কাপড়ঃ হাসপাতালে প্রসবকালীন সময়ে গেলে সেখানে কমপক্ষে দুই থেকে তিনদিন থাকতে হয়। সেক্ষেত্রে প্রসূতি মায়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড় নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে। কাপড় হতে হবে নরম ঢিলেঢালা প্রকৃতির। কাপড় যেন অবশ্যই সুতি হয়৷ বাচ্চাকে খাওয়ানোর সুবিধার মতো পোশাক রাখা উত্তম। এছাড়াও এসময় একটু পুরোনো কাপড় সাথে রাখা জরুরি কারন অনেকসময় রক্তের দাগ থেকে যায়।  এছাড়াও গর্ভবতী নারীর সাথে যারা থাকবেন তাদের কাপড়চোপড় সাথে আনলে অনেক ঝামেলা কমে যায়। 



  • বালিশঃ বালিশ ব্যাথা কমাতে সহায়ক। অনেকসময় হাসপাতালে থাকা বালিশে আনকমফোর্ট ফিল হতে পারে এজন্য বাসা থেকে আরামদায়ক বালিশ সাথে করে আনতে হবে। এসময় প্রসূতি মা অনেক ব্যথায় থাকেন তাই তার জন্য আরামদায়ক অবস্থার দরকার অনেক।



  • শুকনো খাবার এবং পানীয়ঃ  হাসপাতালে একটি নির্দিষ্ট সময়ে খাবার দেওয়া হয়। অনান্য সময়ে যদি ক্ষুধা লাগে সেক্ষেত্রে কিছু শুকনো খাবার কাছে রাখতে হবে। প্রসূতি মায়ের জন্য শুকনো খাবার যেন পুষ্টিগুনসমৃদ্ধ হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শুকনো খাবার হিসেবে বিভিন্ন ফল, ড্রাই ফ্রুটস৷ আমন্ড, সেদ্ধ ডিম৷ পাউরুটি  ইত্যাদি রাখা যেতে পারে। এসময় বিভিন্ন ধরণের ঝালজাতীয় খাবার বেশি গ্রহণ না করাই ভালো। পানীয় হিসেবে কিছু জুস রাখা যেতে পারে। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমানে পানি খেতে হবে।



  •  জুতাঃ হাসপাতালে হাটাচলার জন্য ফ্লাট জুতা সাথে নিতে হবে। হাসপাতালে বিভিন্ন রোগী থাকে আর হাসপাতাল নিজেই রোগ জীবাণুর ভান্ডার। তাই হাসপাতালে অবশ্যই জুতা নিয়ে যেতে হবে। তবে হাটার সুবিদার্থে ফ্লাট জুতা সাথে রাখতে হবে।
  • নার্সিং এইডসঃ প্রসবকালীন জটিলতা শেষ হলে বাচ্চাকে স্তন্যপান করানো হয়৷ এর এজন্যই আগে থেকে নার্সিং ব্রা সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে হবে। নিজের সাইজ আরামদায়ক ব্রা বেছে নিয়ে তা হাসপাতালে আনতে হবে।



  • স্যানিটারি ন্যাপকিন টয়লেট্রিজঃ প্রসবের পরের কিছুদিন অনবরত রক্তপাত হতে থাকে। এজন্য ভালো ব্রান্ডের ন্যাপকিন ব্যবহার করতে হবে। অতিরিক্ত কিছু অন্তবাস এবং ন্যাপকিন হাসপাতালে যাওয়ার পূর্ববতী প্রস্তুতি হিসাবে রাখতে হবে।



  • ইলেকট্রনিক গ্যাজেটঃ অনেকসময় হাসপাতালের অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হতে চায়না, তাই এই সময়ে ইলেকট্রনিক ডিভাইস থাকলে তা দিয়ে বোরডেম সময়টা কাটানো যায়। এছাড়া প্রসবের ব্যথা আপেক্ষিকভাবে কমাতে গান শোনা সাহায্য করে, তাই মোবাইল, হেডফোন এমপিথ্রি নেওয়া যেতে পারে।
  • আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্রঃ  প্রসবের সময় চুল আটকানোর জন্য চুলের ক্লিপ, সাবান, টুথব্রাশ, টুথপেষ্ট, কিছু বাড়তি জামাকাপড়বাচ্চার জন্য কাথা এবং জামাকাপড় ইত্যাদি আগে থেকেই গুছিয়ে রাখতে হবে। এবং হাসপাতালে যাওয়ার সময় নিতে হবে।

 

মা হওয়ার বিষয়টি একটি চমৎকার বিষয়।  এই সময়টাকে উপভোগের সাথে অনেক দায়িত্ব থাকে। স্বাস্থ্যের উপর যে বাড়তি চাপ পরে সেজন্য হাসপাতালে যাওয়া আসা যেন নিত্যকার কাজ হয়ে যায়। তাই হাসপাতালে যাওয়ার আগে সব জিনিস ভালোমতো খেয়াল করে নিতে হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url