৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকায় ২০ টি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া ২০২৩
২০২৩ সালে কম টাকায় বেশি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া
বর্তমান সময়ে চাকরী যেন এক সোনার হরিণ। তাই স্বল্প সময়ে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ব্যবসা প্রধান হাতিয়ার। ব্যবসার জন্য সঠিক লক্ষ্য ও ব্যবসার প্রতি একাগ্রতা থাকলে খুব অল্প সময়েই অনেক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।
ব্যবসা করার জন্য মূলধনের বিষয়ে জ্ঞান থাকা অতীব জরুরি। বর্তমানে শিক্ষার্থী বা ফ্রেশ গ্রাজুয়েট হয়ে থাকলে সীমিত মূলধন যেমন ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ হয় তাহলে আপনার জন্য স্বল্প পুঁজির ব্যবসা করে লাভবান হওয়া অনেক সহজ।
সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকার মধ্যে ব্যবসায় ইনভেস্ট / পুঁজি করা বুদ্ধিমানের কাজ। এতে লাভ না হলেও অন্তত খুব বেশি লস হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
স্বল্প পুঁজি নিয়ে ইয়ং জেনারেশনের জন্য ব্যবসা সম্পর্কিত বিভিন্ন আইডিয়া ও আনুসাঙ্গিক বিষয়দি আলোচনা করা হলো-
আরো দেখুনঃ সহজে কানাডা যাওয়ার ও ভিসা পাওয়ার উপায়
১. ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসা :
বর্তমান সময়ে যুবকদের জন্য ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট জনপ্রিয় একটি ব্যবসা। এনগেজমেন্ট, বিয়ের প্রোগ্রাম, জন্মদিন, শ্রাদ্ধ, স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির র্যাগ ডে ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইভেন্ট প্লানার দ্বারা করলে অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব। মূলধন প্রায় লাখ টাকা হলে তা দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রর ব্যবস্থা ( লাইট, ডেকোরেশন, যাতায়াত) এবং পাবলিসিটি করিয়ে ব্যাবসা দাঁড় করানো সম্ভব। এই ব্যবসাতে ক্ষতি হয় না বললেই চলে। শুধু কাজের সময় লোকবল থাকা এবং ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে দ্রুত লাভ করা যায়।
২. খামার ব্যবসা:
খামারের ব্যবসা একটি পুরাতন ব্যবসা হলেও তা লাভজনক হওয়ার কারণেই এতদিন টিকে আছে। যুবকদের মধ্যে অত্যাধুনিক বিভিন্ন প্রযুক্তির জ্ঞান থাকার কারণে বর্তমানে খামারের ব্যবসাকে একটি আদর্শ ব্যবসা বললেও ভুল হবেনা।
মূলধন লাখের উপরে হলে ছাগলের খামার, লাখের কম হলে হাঁস বা মুরগীর খামার করা যেতে পারে।
খামারের ব্যবসাতে প্রয়োজন হয় জায়গায়, তাই যারা নিজেদের বাড়িতে থাকেন বা খোলামেলা জায়গা অব্যবহৃত হয়ে আছে তারা সহজেই খামার দিতে পারে। এটিতে মুনাফা আসতে একটু সময় লাগে। তবে একনিষ্ঠভাবে সময় দিলে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।
৩. ফটোগ্রাফিঃ
ফটোগ্রাফি শখের বসে করা কাজ হলেও ঠিকঠাক কাজ জানলে ফটোগ্রাফি থেকে বেশ ভালো আয় করা যায়। বিভিন্ন ইভেন্টে, দর্শনীয় স্থানগুলোতে ফটোগ্রাফি করলে তা থেকে আয় করা যায়। এছাড়া ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি করে মোটামুটি ভালো টাকা আয় করা সম্ভব।
প্রোফেশনালি ফটোগ্রাফি করার জন্য একটি ভালো ক্যামেরা এবং কয়েকটি লেন্স থাকা প্রয়োজন। এগুলো কিনতে মোটামুটি খরচ হয় ৮০-১২০ হাজার টাকা। এককালীন ইনভেস্টমেন্ট দ্বারা অনেকদিন পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। তাই শৌখিন হলে শখ মেটাতে এবং ব্যবসা হিসাবে ফটোগ্রাফি বর্তমানে অনেক আর্কষনীয় একটি পেশা/ ব্যবসা।
৪. কফিশপঃ
কাজের ফাঁকে একটু কফির চুমুকের প্রশান্তির বিষয়টা লিখে কোনোভাবেই বর্ণনা করা সম্ভব নয়। শৌখিন মানুষ হলে কফিশপের ব্যবসাটা যেমন উপার্জনের মাধ্যম হবে তেমনিও মনের খায়েশও মেটাবে। একটা কফিশপের দেওয়ার জন্য প্রথমেই জায়গা সঠিকভাবে নির্বাচন করাটা জরুরি। এরপর আসে আকর্ষণীয় ডেকারেশন ও প্রচার। তরুনদের ক্রিয়েটিভ চিন্তাধারায় কফিশপের বিজনেস অনেকেই পছন্দ করছেন ইদানীং। ছিমছাম শান্ত পরিবেশ, কফির চুমুক ও বই কিংবা কফি নিয়ে অফিসের উদ্দ্যেশে রওনা দিয়ে দিন শুরু করা- এই উদ্যোগে কফিশপের ব্যবসা জমজমাট করা সম্ভব স্বল্প পুঁজি হাতে নিয়েই৷ মোটামুটি দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা পুঁজি নিয়ে কফিশপ খোলা হলে মনের খোরাক যেমন মিটবে তেমনি ব্যবসায় উন্নতিও অবশ্যাম্ভাবী।
৫. বেকারীশপঃ
মূলধন মোটামুটি ৫০ হাজারের বেশি হলেই একটা বেকারী শপের ব্যবসা সহজেই দাঁড় করানো সম্ভব। এইজন্য প্রয়োজন ব্যস্ততম মার্কেটে একটি দোকান, দক্ষ বেকার, খাবারের মান ঠিক রাখা, কমিউনিকেশন স্কিল আছে এমন সেলসম্যান এবং একটু প্রমোশন। বেকারীর ব্যবসাতে অনেক বেশি লাভ করা সম্ভব যদি খাবারের মানের তারতম্য না হয়। যদি খাবারের মান কমে যায় তবে লয়াল কাস্টমার তৈরি হবে না এবং ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাবে। বেকারী ব্যবসাতে পুঁজির পরিমান যত বেশি হবে তত দ্রুত মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হবে। এই ব্যবসার ক্ষেত্রে লাভের পরিমান মাথায় রেখে পরবর্তীতে ব্যবসা বাড়ানোর কথা চিন্তা করতে হবে।
৬. অল্প টাকায় অনলাইনে বিজনেস আইডিয়াঃ
মূলধনের উপর ভিত্তি করে অনলাইনে বিভিন্ন ব্যবসায় ইনভেস্ট করা লাভজনক। যেমন অনলাইনে কাপড়, মেয়েদের জুয়েলারি, জুতো, হোমমেড ফুড, বিদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানী করে সেটা রিসেইল করা ইত্যাদি৷ অনলাইনে ব্যবসা করার জন্য আগে টার্গেট অডিয়েন্স সেট করতে হবে, সে অনুযায়ী নিয়মিত পোস্ট করতে হবে যাতে কাস্টমারের কাছে পৌছায়। এছাড়াও পাবলিসিটির জন্য পোস্ট বুস্ট অপশন ইউজ করা যেতে পারে। তবে মূলধনের পরিমান যদি প্রায় ১-৩ লাখ হয় তবে খুবই দ্রুত ব্যবসাতে লাভবান হওয়া যাবে। কারণ অনলাইনে ক্ষুদ্র পরিসরে কাজ করলে অনেক বেশি সময় লাগে, তাই বেশি মূলধন দিয়ে প্রথমেই শুরু করলে লাভ ও দ্রুত আসে৷ তরুণদের ক্ষেত্রে পড়াশুনার পাশাপাশি অনলাইন বিজনেস একটা আশীর্বাদস্বরুপ। কারণ এই সময়টা বসে না থেকে ব্যবসাতে কাজে লাগিয়ে অনেক টাকা আয় করা সম্ভব।
৭. ফ্রিল্যান্সিং ফার্মঃ
ফ্রিল্যান্সিং ফার্ম দ্বারা সহজেই ঘরে বসেই আয় করা সম্ভব। এইজন্য দরকার বেশ কয়েকটি ল্যাপটপ, ফ্রিল্যান্সিং কাজ জানেন এমন কিছু লোক, দক্ষ ম্যানেজমেন্ট এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেট। ফ্রিল্যান্সিং ফার্ম দিয়ে একটা বড় জনগোষ্ঠীকে কাজ শেখানো যায়। এটি অনেকটা কোচিং সেন্টারের মতো৷ তাই প্রথমেই জায়গা নির্বাচন করতে হবে রাস্তার পাশে যাতে করে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়। এরপর পরিচিতি সৃষ্টি করতে পাবলিসিটি করতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং ফার্ম এর ব্যবসা একটি লাভজনক ব্যবসা। এছাড়া মূলধন কম হলে ( ৫০ হাজার এর মতো) নিজেই ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে প্রায় ২০-৫০ হাজার টাকা উপার্জন করাও সম্ভব।
৮. প্রসাধনসামগ্রীর ব্যবসাঃ
মূলধনের উপর নির্ভর করে কসমেটিকের ব্যবসা একটি লাভজনক ব্যবসা। যেখানে উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের যাতায়াত বেশি এমন একটি জায়গায় কসমেটিক এর দোকান দিলে ব্যবসায় মুনাফা করা সুবিধা হবে। কসমেটিকস এর ব্যবসার জন্য বড় দোকান থেকে পাইকারি মূল্যে জিনিস কিনে কিংবা ভালো ব্রান্ডের জিনিস দোকানে তুললে লাভ বেশি হবে। আপনার দোকান যদি ভাড়া নিতে না হয় তাহলে আপনি পুরো টাকাই কসমেটিক কাঁচামাল কিনতে ব্যয় করতে পারেন। এছাড়া দোকানটিকে আকর্ষণীয় করতে হালকা ডেকোরেশন করা যেতে পারে। এছাড়াও কসমেটিকস সমন্ধে মোটামুটি জ্ঞান থাকলে ব্যবসা ভালো জমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৯. কিভাবে ফলের ব্যবসা করবেন অল্প টাকায়ঃ
যে সিজনের ফলের ব্যবসা করতে চান সেই সিজনে ফলের একটি লিস্ট করতে হবে। ফল কোথায় ভালো পাওয়া যাবে, যাতায়াত কেমন হবে, ফল বিক্রি কোথায় ভালো হবে এসব সম্পর্কে হালকা জ্ঞান থাকলেই ফলের ব্যবসাতে লাভ করা সম্ভব। অনেকসময় অনলাইনেও সিজনাল ফলের ব্যবসাতে ভালো লাভ করা যায়, সেক্ষেত্রে ডেলিভারিতে যেন ত্রুটি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ।
১০. ক্যাটারিং সার্ভিসঃ
তরুনদের ক্যাটারিং সার্ভিস এর ব্যবসাকে অনেকেই লাভজনক ব্যবসা হিসাবে গন্য করে থাকেন। বর্তমান মানুষের সময়ের অনেক মূল্য। তাই বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন জন্মদিন বিয়ে, পার্টি তে আবার স্কুল, কলেজ বা অফিসে ক্যাটারিং সার্ভিস দেওয়া যায়। আপনি এবং টিম সেখানে রান্না করবেন এবং পরিবেশনের দায়িত্ব নেবেন। আবার অনেক অফিসে নিয়মিত খাবারের যোগান দেওয়ার ক্যাটারিং সার্ভিস চালু করা গেলে অনেক লয়াল কাস্টমার থাকে। খাবারের মান ভালো রাখতে হবে, ডেলিভারি ব্যবস্থা এবং ভালো রাধুনি থাকতে হবে তবেই এই ব্যবসাতে উপার্জন সম্ভব। যদি প্রচারণা করা সম্ভব হয় তাহলে দ্রুত অর্ডার আসবে এবং কম পুঁজি নিয়ে দ্রুত লাভবান হওয়া সম্ভব হবে।
এছাড়াও ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকার মধ্যে আরো কয়েকট ব্যবসা আইডিয়া হলো-
১১. স্টেশনারি আইটেম ব্যবসা
১২. ফুড কার্ট ব্যবসা/ খাবার গাড়ি
১৩. মোবাইল পার্টস এর ব্যবসা
১৪. ফুলের ব্যবসা
১৫. ফলের জুসের দোকান
১৬. মাছ চাষ
১৭. ছোট রেস্তোরাঁ
১৮. পুরোনো বইয়ের ব্যবসা
১৯. কোচিং সেন্টার
২০. টিফিন সার্ভিস
সফলতা অর্জনের উপায়
আরো দেখুনঃ