চীন থেকে পণ্য আমদানি করার নিয়ম

চীন থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি

চীন থেকে পণ্য আমদানি

২০২১ সালের ডিসেম্বরে ২.৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার দামের জিনিস আমদানী করে চায়না থেকে । যেটা আমাদের ইতিহাসে হায়েস্ট ।কিন্তু অভাক করার মত ফ্যাক্টরটা কি জানেন ?  তার পরের বছরেই ২০২২ সালের জুন মাসে আমরা আবার ২.০৬ বিলিয়ন ডলার ভ্যালু প্রোডাক্ট ইমপোর্ট করেছি । মানে ডিসেম্বরের আনা ২ বিলিয়ন ডলার দামের যত প্রডাক্ট, সবগুলো অলরেডি আমাদের মার্কেট কনজিউম  করে ফেলেছে। ২ বিলিয়ন  ইউএস ডলার মানে ২০ হাজার কোটি টাকা !!  

আজকের ব্লগে আপনাদেরকে দেখাবো কিভাবে চায়না থেকে ইমপোর্ট বিজনেস করতে পারেন। চীন থেকে পণ্য আমদানির স্টেপ গুলো কি কিচীন থেকে পণ্য আমদানিতে  কি কি কাগজপত্র লাগবে?  রিস্ক  কেমন?  প্রফিট কেমন? আলটিমেটলি চায়না থেকে ইমপোর্ট করে আপনি কিভাবে সাকসেসফুলি বিজনেসটা চালাতে পারবেন।

আরো দেখুনঃ সহজে কানাডা যাওয়ার ও ভিসা পাওয়ার উপায়

বাংলাদেশ সরকার বেশ কয়েক বছর ধরে ইমপোর্ট বিজনেস এর থেকে এক্সপোর্ট বিজনেস বেশি জোর দিচ্ছে । এক্সপোর্ট এর উপর ইনসেনটিভ দেওয়া শুরু করে চায়নার সাথে ডিউটি ফ্রি এক্সপোর্ট এইসব ডিল  করে এক্সপোর্ট কে বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে । এবং এটা খুবই স্বাভাবিক। যত বেশি এক্সপোর্ট হবে বাংলাদেশ ততবেশি ডলার ঢুকতেছে । বেশি বেশি ডলার মানে বাংলাদেশে রিজার্ভের ডলার টা ও বেশি থাকবে। এতে করে বাংলাদেশে ইকুনোমিক অবস্থা আরো ভালো হবে।

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাবসা করতে কি কি কাগজ পত্র লাগবে? 

মানুষের ত ডিমান্ড আছে, তাইনা? আমরা যা কিছু চাই, বা ডিমান্ড করি, সেটা ত সব কিছু বাংলাদেশে প্রডিউস হয় না সাভাবিক ভাবে ।  আর এখানেই খেলায় আসে ইম্পোর্টাররা। কিন্তু এই খেলায় জয়েন করতে হলে শুরুতেই আপনার কিছু ডকুমেন্ট লাগবে।  প্রথমে লাগবে  ICR (Import Registration Certificate ) । IRC পাওয়ার পর আরো কিছু কাজ করা লাগবে । যেমন

  • ·        ট্রেড লাইসেন্স
  • ·        ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার
  • ·        এনআইডি কার্ড
  • ·        বিজনেস ব্যাংক একাউন্ট
  • ·        ট্রেড এসোসিয়েশন  থেকে মেম্বারশিপ সার্টিফিকেট
  • ·        সার্টিফিকেট অফ ইনকর্পোরেশন (আপনি যদি কোন কোম্পানির আন্ডারে IRC চান)

এসব কিছু আপনি একটা আইনজীবীর মাধ্যমে গুছাই  ফেলতে পারবেন।  তারপর সেটা আপনাকে ডাকযোগে বা মেইলে সাবমিট করতে হবে আমদানি রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে । এই সবকিছু পেয়ে যাবেন এই সাইটে।

চী থেকে কিভাবে পণ্য কিনবেন ? 

আপনি ধরেন IRC পেয়ে গেলেন। এখন,  আপনি কি প্রোডাক্ট আনতে চান সেটা সিলেক্ট করবেন । সেটা করার জন্য আপনাকে মার্কেট স্ট্যাডি  করতে হবে, রিসার্চ করতে হবে,   যে কোন প্রোডাক্ট মার্কেট এর ডিমান্ড আছে । ঠিক তার পরে আপনাকে একজন সেলার খুঁজে বের করতে হবে। এটা আবার অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। Best Way হলো, Canton Fair বা China import and export Fair। ওইখানে চায়নার সবচেয়ে সেরা সেরা সেলার রা আসেন তাদের প্রোডাক্ট নিয়ে। চাইনা তে গিয়ে আপনি নিজের চোখে দেখে আসতে পারেন । অথবা আরেকটা কাজ করতে পারেন সেটা হলো আপনি অনলাইনে সার্চ করতে পারেন।  প্রথমটা একটু খরচের ব্যাপার, আর  সেকেন্ড টা ভেরিফাই করার কিছুটা ভয় থাকে । আর স্বাভাবিকভাবে অনলাইনে বেচাকেনা করাতে একটু ভয় কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক।  কেন ভয় পাবেন সেই কথাটা আর না বলি এই ব্লগে।

চীন থেকে কিভাবে পণ্য আনবেন ? 

চীন থেকে পণ্য আমদানি

যাইহোক ধরেন অর্ডার প্লেস করলেন,  এখন টাকা পয়সার ব্যাপার । আপনার সেলারের কাছ থেকে পাওয়া ইনভয়েস/ IRC  কপি, ট্রেড লাইসেন্সের কপি,  আর ১৩ ডিজিটের ভেট নাম্বার নিয়ে আপনাকে ব্যাংকে যেতে হবে । ব্যাংক সেগুলো ভেরিফাই করে আপনাকে একটা LC জেনারেট করে দিবে । সেই LC আপনি মেনুফেকচ্যারের কাছে পাঠাবেন । সেটা  দিইয়ে সে টাকা তুলবে এবং প্রোডাক্ট টা আপনার কাছে পাঠিয়ে দিবে । সেই প্রোডাক্ট টা আপনার কাছে BY AIR  আসতে পারে BY SEA  হয়ে ও  আসতে পারে।  সেই ব্যাপারটা আপনি আর সেলার  ডিসকাস করে নিতে পারেন

চীন থেকে পণ্য কিনতে কত টাকা লাগবে? 

আপনি কিন্তু বাংলাদেশে বসে চায়না থেকে প্রোডাক্ট কিনতে ৩০ হাজার চাইসিস ইয়ান  চেয়ে বেশি খরচ করতে পারবেন না।  এটা কিন্তু মাথায় রাখতে হবে । 

চায়না থেকে মোবাইল আমদানিঃ

আপনি যদি মোবাইল নিয়ে আসতে চান, সেক্ষেত্রে আপনার BTRC AUTHORIZED লাগবে এবং গাড়ির ক্ষেত্রে ও এই ব্যপার টা একই।

কাস্টমস থেকে কিভাবে পণ্য পাবেন ? 

আপনি কোনো ডিপ্লোমেটিকিক বা প্রিভিলিয়াজ চ্যানেলের মাধ্যমে নিয়ে আসবেন, সে ক্ষেত্রে ঝামেলা একদমই ফ্রি।  আপনার প্রোডাক্ট যখন আসবে তখন আমাদের যে কোন একটা পোর্ট এ এসে নামবে । এখন আপনার প্রোডাক্ট আসলে লিগ্যাল কিনা,  আপনি যেটা বলেছেন নিয়ে আসবেন , সে  প্রোডাক্টটা সেইটা কিনা,  কাগজপত্র সব ক্লিয়ার করে জিনিসটা বের করে আনার জন্য আপনার একটা মানুষের হেল্প লাগবে । এই মানুষটা হলো C & F AGENT  

কাস্টমস ই  আসলে সবচেয়ে বড় প্রব্লেম । আপনার প্রোডাক্ট ত আসলে কোথায় চলে যায়,  কি হয়ে যায়, কেউ জানেও না বুঝতেও না।  এই যে শুরুতে  IRC নেওয়া, LC নেওয়া,  পাঠানো,  প্রোডাক্ট সোর্স করা, প্রোডাক্ট আনা, কাস্টমস ক্লিয়ার করা,  মানে হাজার হাজার  ডকুমেন্টসের  কাজ । এবং এটা খুব বিরক্তিকর একটা জিনিস। 

চীন থেকে পণ্য আনার মাধ্যম 

এই যায়গায় আপনাকে হেল্প করতে পারবে MOVE ON  ২০১৩ সাল থেকে চাইনা আমেরিকার দুবাইয়ের যে কোন প্রোডাক্ট একদম ঝামেলা ছাড়া পৌঁছে দিচ্ছে একদম কাস্টমারের ঘরের সামনে । ধরেন,  আপনার প্রোডাক্ট কেনা হয়ে গেছে, এখন শিপমেন্ট নিয়ে প্যারা খাচ্ছে।! MOVEON এখানে ও আপনাকে হেল্প করতে পারবে।  এদের দুইটি সার্ভিস আছে।

১। Buy & Ship For Me: যেখানে আপনি তাদের সাইট থেকে প্রোডাক্ট চয়েস করবেন। কেনাকাটা , শিপমেন্ট সব তাদের হাতে। 

২। Shift For me:  আপনি শুধু ওদের জানায় দিবেন যে , আপনার একটা প্রোডাক্ট কিনা আছে, ওইটা খালি বাংলাদেশ নিয়ে আসা লাগবে । আপনার IRC লাগবে না, ট্রেড লাইসেন্স লাগবে না ,পেমেন্ট নিয়ে ও কোন টেনশন করতে হবে না ।  আপনি শুধু ওদেরকে জানাবেন আপনার কি প্রোডাক্ট  এবং কয়টা প্রোডাক্ট লাগবে।  টাকা-পয়সার লেনদেন থেকে শুরু করে কাস্টমসের যত্তসব কাহিনী আছে সবগুলা তারা ক্লিয়ার করে ,আপনার বাসার সামনে প্রোডাক্টগুলো হাজির করে দিবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে আপনি যদি MOVE ON  থেকে অর্ডার দেন, আপনার জন্য তারা একজন ডেডিকেটেড রিপ্রেজেন্টেটিভ দিয়ে দিবে। যিনি আপনাকে আপনার প্রোডাক্ট কোথায় আছে , কেমন আছে সব কিছু তার মাথাব্যথা, এবং সে আপনাকে জানায় দিবে।  পাশাপাশি ডেলিভারি টাইমের আপডেট ও আপনাকে দিয়ে দেয়া হবে।

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাবসার সমস্যা কি কিঃ

২০২১ সালে বাংলাদেশ প্রায় ৮৫ বিলিয়ন ডলারের প্রোডাক্ট ইমপোর্ট করে।  প্রতিবছর আমাদের কম করে হলেও ৫০ বিলিয়ন ডলারের মতো প্রোডাক্ট লাগে । তার মানে বাজার কিন্তু বেশ বড়।  তাহলে এই মার্কেটে আরো বেশি মানুষ যোগ দিচ্ছে না কেনো? এখানে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর টা হচ্ছে  বিশ্বাসের ইসু। আমাদের দেশে কেউ যখন বাইরে থেকে প্রোডাক্ট নিয়ে আসে তখন তার কোন পরিচিত কাউকে দিয়ে প্রোডাক্ট টা নিয়ে আসে। অথবা যদি মাল্টিপ্লাই  আইডি ভেদে আপনি যান, আপনি দেখবেন যে,  একটা মানুষ চেয়ার টেবিলে বসে আছে।  ওদের গিয়ে বলবেন যে আপনার কোন দেশ থেকে কোন প্রোডাক্ট লাগবে,তারাই  ম্যানেজ করে দেবে । কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট একটু সময়ের  ব্যপার। সাথে কাস্টমসের কাহিনী  তো বুঝেনই তো । প্রোডাক্ট হারানো এটা একটা সমস্যার ব্যাপার। আর এই লম্বা জার্নি তো অনেক সময় জিনিস নষ্ট হয়ে যায় । দেখা যায় যে কাস্টমস এ প্রোডাক্ট ছাড়াতে একটু দেরি হয়, তখন এসব মানুষকে ফোন দিয়ে আর পাওয়া যায় না । তখন আসলে আমি বিপদে পড়ে যাবেন। তাহলে এখন উপায় টা কি? আপনি যদি এক্সপোর্ট ইমপোর্ট বিজনেস  এ সিরিয়াসলি নামতে চান কোমর বেধে, তাহলে আমি আপনাকে বলব আপনি লিগ্যাল মাধ্যম টা অনুসরন করেন । আর এসব স্টেপগুলো আমরা ব্লগের একদম শুরুতেই বলে দিয়েছি।  

বাই দ্যা ওয়ে এই বিজনেস এ এসে লাখ লাখ টাকা কামাই করে ফেলবো এই বিষয় টা মাথায় রেখে প্রথমে আসবেন না । মনে করেন যে এই বিজনেস এ আসলে লস ই হবে। তো সব ব্যাবসায় যেরকম একটা ফান্ডামেন্টাল ফেক্টর গোলা কাজ করে, এখানে ও সেটায় খাটবে।  মার্কেট টাকে ঠিক মত বুজতে হবে। কাস্টমারকে ঠিকমত বুঝতে হবে, এবং লস হবে এটা ভেবেই আপনাকে নামতে হবে।

চলে এবার আপরা জেনে নিই- ইমপোর্ট বিজনেস এ কি কি করা যাবেনা, কি কি আমাদেরকে এড়িয়ে চলেতে হবে, কি কি বিষয়ে একটু কেয়ারফুল থাকতে হবে?

কোন অবস্থায় এমন কারো সাথে ডিল এ যাবেন না যার কিনা IRC বা সমমানের কোন ডকুমেন্ট যার কাছে  নাই।  এইটা কিন্তু একটা বড় ব্যাপার। এটা কখনোই করা যাবেনা।  ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট বিজনেসের COD/  ক্যাশ অন ডেলিভারি এই জিনিষটা কিন্তু কোনো মতেই  মানা হয় না। আপনাকে আগে থেকেই পেমেন্ট করতে হবে । কিন্তু আপনার প্রপার ডকুমেন্টেশন গুলো কিন্তু রেখে তারপরে পেমেন্ট করবেন । দেশে যে পারমিট এর লিমিট আছে সেটার মধ্যে পেমেন্ট টা করবেন । লিগাল আইটেমের মধ্যে ইলিগ্যাল আইটেম আনা যাবে না।  জানি করবেন না,  যাস্ট  বলে রাখলাম।  এই গুলা কিন্তু অনেক সময় জেল-জরিমানার ক্যাস  হতে পারে।

(আলিবাবা থেকে পণ্য আমদানি) 

শুরুতেই কোটি টাকার প্রোডাক্ট আনবেন না । অল্প কিছু এনে দেখবেন যে মার্কেটে ডিমান্ড কেমন। সব ব্যবসায়ী কিন্তু অল্প অল্প অল্প করে আগায় । এই বিজনেস ও একদম সেইম   বাংলাদেশ কিন্তু চাইনিজ মার্কেটে এবং এটার  ডিমান্ড কিন্তু অনেক বড়।  এবং আশেপাশের দেখলে কিন্তু সেটা বোঝা যায়। কিন্তু অন্যান্য সব দেশের সরকারের মতো আমাদের দেশের সরকার ও  স্বাভাবিকভাবে ইমপোর্টে খুব একটা জুর  দিতে চায় না।  কারন একটা দেশ স্বাভাবিকভাবে চাইবে  যে সে যেনো  self-sufficient হয়।সেই ক্ষেত্রে ইমপোর্ট এর উপর ডিপেন্ডেন্ডসি টা কমবে, তত আপনার দেশের জন্য ব্যাটার।

কিন্তু আজকের ব্লগে আমি এটা বলতেছি না যে , কি উচিৎ, কি উচিৎ না। বা আমি কোনো বিজনেস ট্রেটিজি নিয়ে ও আপনাদের সামনে বলছি না । আমি জাস্ট তুলে ধরতে চাইছি ইমপোর্ট বিজনেস যদি করতে চান তাহলে কিভাবে হয়ে থাকে সাধারণত ? যেহেতু ডিমান্ডে আছে,সাপ্লাই লাইন টা আপনাকে একটু ভালোভাবে ধরতে হবে । আর ভালো করে করতে পারলে You Are Successful.  

সৌজন্যে: Nafees Salim

You Tube Channel: https://youtube.com/@NafeesSalim

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url