রক্তশূন্যতা দূর করার উপায়
রক্তস্বল্পতা হলো , যদি কারো রক্তে লোহিত রক্তকণিকা বা হিমুগ্লোবিন অনেক বেশি কমে যায় তাকে সাধারণভাবে রক্তস্বল্পতা বলে থাকি । এবং এই হিমুগ্লোবিন সাধারণভাবে যদি আমরা ১২ এর গ্রাম উপরে পেয়ে থাকি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আমরা বলে থাকি যে তার হিমোগ্লোবিন ভালো আছে বা রক্তস্বল্পতা নেই। কিন্তু 12 গ্রামের চেয়ে যদি কমে যায় সে ক্ষেত্রে আমরা বলি তার রক্তস্বল্পতা রয়েছে । এবং সেই রক্তস্বল্পতা থাকলে তার কিন্তু বেশ কিছু সমস্যা তৈরি হতে পারে ।
রক্তশূন্যতা
এর লক্ষণ কি কিঃ
রক্তস্বল্পতার
কারনে মানুষের হার্টের সমস্যা হতে পারে, ব্রেনে
সমস্যা হতে পারে, কিডনি-লিভার জটিলতা হতে পারে , সকল
মাংসপেশিগুলো দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
এরকম
যেহেতু অনেকগুলো সমস্যায় রক্তস্বল্পতা থেকে হয় এবং
রক্তস্বল্পতা থেকে একটা পর্যায়ে
হার্ট ফেইলিউর হয়ে মৃত্যুও ঘটতে
পারে , সুতরাং রক্তস্বল্পতা দূর করতে হবে
।
সুতারাং এই রক্তস্বল্পতা কারো থাকলে তিনি সারাক্ষণ দুর্বল অনুভব করবেন । তার শ্বাসকষ্ট , বুক ধড়ফড় করবে, বুকে ব্যথা হবে , মাথা ঝিনঝিন করবে। সুতরাং তাকে সুস্থ থাকতে হলে তার রক্তস্বল্পতা দূর করা অবশ্যম্ভাবী ।
রক্তশূন্যতা কারনে কিঃ রক্তস্বল্পতা বলতে আমরা সাধারন ভাবে যেটা ডিফাইন করেছি যে , রক্তের লোহিত কণিকার হিমোগ্লোবিন যদি কমে যায় তাহলে এটা কে বলেছি যে আমরা রক্তস্বল্পতা। কারণগুলোর মধ্যে অনেকগুলো কারণ আছে। তার মধ্যে একটি কারণ হলো নিউট্রেশনাল । নিউট্রেশনাল ডায়েট এর ডিফেসিয়েন্সির কারনে হয়ে থাকে। সাধারনতঃ
- আয়রন ডিফেসিয়েন্সি
- ফলিক এসিড ডিফেসিয়েন্সি
- ভিটামিন বি ১২ ডিফেসিয়েন্সি
- বিশেষত এই তিনটি কারনে রক্তস্বল্পতা বেশি দেখা দেয়।
রক্তশূন্যতার
রোগ সমুহঃ রক্তস্বল্পতার
আরো অনেকগুলো কারণ আছে ।
কারো কিডনির সমস্যা থাকলে সেখান থেকে রক্তস্বল্পতা তৈরি হয় । সেক্ষেত্রে কিডনি রোগের চিকিৎসা করলে রক্তস্বল্পতা দূর হবে ।
আবার কারো থেলাসেমিয়া আছে। এই থেলাসেমিয়া একটি জন্মগত রোগ । এটি থাকলে রক্তস্বল্পতা হয় । সেটির কারণে কিন্তু আর কিছু দিন কয়েক মাস পর পর রক্ত দিতে হতে পারে । আবার অন্য কিছু রোগ ব্যাধি আছে, সেগুলোর কারণে যদি রক্তস্বল্পতা দেখা যায় তাহলে সেই রোগের চিকিৎসা করে রক্তস্বল্পতাকে ম্যানেজ করা যাবে।
রক্তশূন্যতার
কারনঃ অধিকাংশ মানুষের কিন্তু রক্তস্বল্পতা দেখা যায় নিউট্রিশনাল
ডেফিসিয়েন্সির কারনে । এই নিউট্রিশনাল ডেফিসিয়েন্সি হলোঃ
- আয়রনের ঘাটতি ,
- ভিটামিন বি টুয়েলভ এর ঘাটতি, এবং
- ফলিক এসিডের ঘাটতি।
কি খেলে রক্তশূন্যতা ভালো
হবেঃ আপনাকে
জানতে হবে দুটো জিনিস
।
- কোন কোন খাবারে এই উপাদানগুলো আছে।
- এবং সেগুলো আসলে কিভাবে খেলে আপনার রক্তস্বল্পতা দূর হবে ।
প্রথমে আমি আয়রনের কথা বলি। কারণ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উপকারি হল আয়রন ডেফিশিয়েন্সি অ্যানিমিয়া । মানে আয়রনের অভাবে রক্ত স্বল্পতা । আয়রন আমাদের খাবারে পাওয়া যায় । সেই খাবারগুলো আপনি খেলেই এই ঘাটতে পূরণ হবে । আমরা যদি এটাকে ভাগ করি যে, এনিমেল সোর্স থেকে, এবং প্লান্ট সোর্স থেকে আয়রন । প্লান্ট সোর্স থেকে আয়রন যেটা আসে, যেমন আমরা অনেকেই জানি কচুশাক , কাঁচা কলা , বিভিন্ন শাকসবজি, ফল এগুলোতে আয়রন আছে । কিন্তু এই যে শাক সবজি এবং ফল থেকে যে আয়রন , এটা কিন্তু আমাদের খাওয়ার পরে পাকস্থলী থেকে এভজার্সন তেমন একটা হয় না। সুতরাং আমরা যদি শুধু এগুলোই খেয়ে থাকি তাহলে আমাদের আয়রনের ঘাটতি কিন্তু ভালোভাবে পূরণ হবে না । অপরদিকে যেগুলো এনিমেলস থেকে আসে সেগুলো আমাদের পাকস্থলী তে খুব ভালো পরিপাক হয় এবং দ্রুত আপনার ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে ।
তো এনিমেল সোর্স আয়রন গুলো কি কি ?
আপনার
এনিমেলস এর আয়রনের উৎস
গুলোর বিশেষ করে , গরুর মাংস, খাসির মাংস এবং আমাদের
মুরগি অথবা গরুর যে
অর্গান মিট যেমন গিলা,
কলিজা্ যকৃৎ এগুলোতে পর্যাপ্ত
আয়রন থাকে । এবং সামুদ্রিক মাছ
।
সামুদ্রিক মাছেও পর্যাপ্ত এবং প্রচুর আয়রন
রয়েছে। তো
এগুলো খাওয়ার পরে কিন্তু আয়রন
সবচেয়ে বেশি এভজর্ভ হয়
। এবং
আমরা এই সোর্স থেকে
আয়রন সবচেয়ে বেশি পেয়ে থাকি
। এবং এগুলো থেকে
আয়রন ঘাটতি , আয়রন স্বল্পতা বা রক্তস্বল্পতা দ্রুত
পূরণ হয়ে যাবে।
হার্টের সমস্যার খাবারঃ
যাদের আবার কোলেস্টেরলের সমস্যা আছে বা হার্টের সমস্যা আছে তারা তো, যেমন গরু, খাসির মাংস খেতে পারবেন না । তাদের জন্যও তাহলে আয়রন ঘাটতি পূরণ করার উপায় হলো , তারা সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন । সামুদ্রিক মাছে কিন্তু আপনার কোলেস্টেরল নেই, এবং হার্টের জন্য খুবই ভালো এবং আপনি সেখান থেকে আয়রন পেয়ে যাবেন।
এখানে একটি বিশেষ টিপস আপনাদের বলে রাখি । আপনি যখন এই বিশেষ খাবারগুলো খাবেন , খাবার দাবার খেয়ে আপনি আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে চাইবেন, রক্তস্বল্পতা পূরণ করতে চেষ্টা করবেন , তখন এই পাকস্থলীতে যত বেশি আয়রন হবে, আপনার তত দ্রুত আপনার আয়রন ঘাটতি অথবা রক্তস্বল্পতা দূর হবে।
তো আয়রনের পাওয়ার জন্য বা ভালোভাবে আয়রন হওয়ার জন্য ভিটামিন সি খুব প্রয়োজন। সুতরাং আপনি যখন আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে আপনার আয়রন ঘাটতি বা রক্তস্বল্পতা পূরণের উদ্দেশ্য থাকবে, তখন কিন্তু সেই খাবারের সাথে আপনাকে লেবু রাখতে হবে।আপনি যদি ওই খাবারের সাথে লেবু রাখেন, তাহলে আপনার আয়রনের এভজর্সন খুব ভালো হবে । এবং অনেক বেশি এভজর্সন হবে ,আপনি অনেক দ্রুত আয়রনে ঘাটতি দূর করতে পারবেন ।
চা মানুষের কি ক্ষতি করে? আরেকটি ব্যাপার হলো, খাবারগুলো খাবার পরে যদি আপনি চা খাব, তাহলে কিন্তু আপনার আয়রন ব্যাহত হবে । অনেকের কিন্ত একটা অভ্যাস আছে যেমন, লাঞ্চের পরে বা অন্য খাবারের পরে একতু চা খায়। তো আপনার যদি ব্যাপারটি এরকম হয়, আপনার যদি রক্তস্বল্পতা আছে, আয়রন ঘাটটি আছে এবং আপনি আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাচ্ছেন সেগুলো পূরণ করার জন্য তাহলে আপনার খাবারের পরে অবশ্যই চা পরিহার করতে হবে । খাবারের সাথে সাথে চা খাওয়া যাবেনা । খাবারের পর পরই চা খাওয়া যাবেনা । তাহলে আমাদের আয়রনের এভজর্সন ব্যর্থ হবে এবং রক্তস্বল্পতা দূর হবে না ।
ফলিক এসিড কোথায় পাওয়া যাবেঃ ফলিক এসিড পাওয়ার জন্য আপনাকে শাক সবজির উপর নির্ভর করতে হবে। সকল লিপি ভেজিটেবলস আমাদের চারপাশে আমরা দৈনন্দিন যে শাকসবজি ভেজিটেবলস গুলো খেয়ে থাকে , সেগুলোতে সকল ভেজিটেবলসসে ফলিক এসিড আছে । আপনি এগুলো যদি নিয়মিত খান তাহলে এবং এর অভাব পুরন হয়ে যাবে।
যেহেতু
আমাদের দেশের মানুষরা মোটামুটি শাকসবজি সবাই খেয়ে
থাকে, সুতরাং ফলিক এসিডের অভাবে
খুব একটা বেশি দেখা
দেয় না । শুধুমাত্র
গর্ভবতী মায়েদের একটু ফলিক এসিড
এর চাহিদা বেশি থাকে ।
সেজন্য গর্ভাবস্থায় অনেকেই অনেককেই সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ট্যাবলেট হিসেবে আয়রনের সাথে ফলিক এসিড
দিইয়ে দেয়া হয় যাতে তাদের
এই ঘাটতিটা তৈরি না হয়
। এছাড়া যারা স্বাভাবিক বেলেন্স
ডায়েট সব সময় মেনটেন
করে তারা
ফলিক এসিড শাকসবজি থেকে
পর্যাপ্ত পেয়ে থাকে।
আর হলো ভিটামিন বি
১২ঃ
আপনি
যদি সামুদ্রিক মাছ খান , আপনি
যদি আয়রন ঘাটতি পূরণের জন্য রেডমিট গরুর
মাংস মুরগির মাংস খান, তাহলে কিন্তু একই সাথে আপনি
এখান থেকে ভিটামিন বি
১২ এ পেয়ে যাবেন
। ডিমের ভেতরে ভিটামিন বি ১২ আয়রন
এগুলো পেয়ে যাবেন। তো
সুতরাং আপনি যদি একটি
বেলেন্স ডায়েট মেন্টেন করেন সেখান থেকে
কিন্তু আপনার ভিটামিন বি ১২ এবং
আয়রন সবই চলে আসবে।
ব্যালেন্স ডায়েট কিঃ ব্যালেন্স ডায়েট খাবারেই আপনার 6 টি উপাদান থাকতে হবে । কার্ব হাইড্রেড বাঁ সর্করা, প্রোটিন বা আমিষ, এবং ফ্যাট বা চর্বি , ভিটামিনস/ মিনেরালস । এগুলোকে আমরা ব্যালেন্স ডায়েট বলে থাকি। আপনি যখনই ব্যালেন্স ডায়েট থাকবেন , ব্যালেন্স ডায়েট খাবেন, যেমন প্রোটিন আপনি খাচ্ছেন , ডিম, মাছ্ , মাংস সি-ফিস, তখন তো আপনি এখান থেকে আয়রন পেয়ে যাচ্ছেন ।এবং একইসাথে আপনি বি ১২ ও পেয়ে যাচ্ছেন। আর আপনি যখনই লিপি ভেজিটেবলস খাবেন , তরকারি গুলো খাবেন , ফল খাবেন সেখান থেকে আপনি ভিটামিন বি ১২ ও ফলিক এসিড ও পেয়ে যাচ্ছেন ।
ভিটামিন বি ১২ এবং আয়রন এর কমন সোর্স হল রেডমিট এবং সামুদ্রিক মাছ । তো আপনারা যদি এগুলো খান এবং তাতে যদি দুটো জিনিস একটু মেন্টেন করেন, যেমন খাবারের সাথে একটু লেবু রাখা। আর খাবারের পরে চা না খাওয়া । তাহলে আপনার আয়রনের এভজর্ন এ ব্যর্থ হবে না এটা যদি আপনি একটু মেনশন করেন আপনি কয়েক মাসের ভিতরেই আপনার যে রক্তস্বল্পতা পুরন করতে সক্ষম হবেন ।
আরো দেখুনঃ